বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে এক গভীর সংকটে নিপতিত। সরকারি ক্যালেন্ডারে স্বাভাবিক ছুটি ছাড়াও পাবলিক পরীক্ষা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এবং অনির্ধারিত ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালু থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময়েরও কম। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ব্যাসিক অর্জনে, দীর্ঘমেয়াদি শিখনে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে।
বাস্তব পরিস্থিতি: ৪০ দিনের টানা ছুটি ও তার প্রভাব
২০২৫ সালের শুরুতেই আমরা দেখেছি পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বিভিন্ন দিবসের ছুটি মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৪০ দিনের জন্য বন্ধ ছিল। শিক্ষাপঞ্জি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ছিল অনেক প্রতিষ্ঠানে শেষ ক্লাসের দিন এবং পুনরায় শ্রেণিকক্ষে ফেরা হয়েছে এপ্রিলের ৮ তারিখে।
এরপরপরই শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা (৯ এপ্রিল – ১৩ মে)। যেমনটি ঘটেছে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে, যেখানে এসএসসি কেন্দ্র হওয়ায় অন্য শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত নেওয়া যাচ্ছে না।
🔗 [সূত্র: প্রথম আলো]
শিক্ষার মান নিয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য
‘গণসাক্ষরতা অভিযান’-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৪ মাসে ৪২৭ দিনের মধ্যে মাত্র ১৪৮ দিন স্কুল খোলা ছিল। অর্থাৎ ২৭৯ দিন ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, যা কার্যত অর্ধেক বছরের বেশি সময়।
🔗 [সূত্র: মোস্তাফিজুর রহমান, গণসাক্ষরতা অভিযান]
শুধু সরকারি ছুটির জন্যই নয়, পাবলিক পরীক্ষার সময়ও বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে—যদিও এই বন্ধ সরকারি ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি শিক্ষাপঞ্জি ও বাস্তবতার মধ্যে এক বিশাল ফারাক সৃষ্টি করছে।
📊 ১৪ মাসে বিদ্যালয় বন্ধের চিত্র: বাস্তবতা কতটা ভয়াবহ?
🔍 তথ্যসূত্র: গণতান্ত্রিকতা পর্যবেক্ষণ গবেষণা প্রক্রিয়া (সর্বশেষ আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০২৪)
মাস | স্কুল খোলা (দিন) | স্কুল বন্ধ (দিন) |
আগস্ট, ২০২৩ | ১৬ দিন | ১৫ দিন |
সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১৭ দিন | ১৩ দিন |
অক্টোবর, ২০২৩ | ১৫ দিন | ১৬ দিন |
নভেম্বর, ২০২৩ | ৮ দিন | ২২ দিন |
ডিসেম্বর, ২০২৩ | ০ দিন | ৩১ দিন |
জানুয়ারি, ২০২৪ | ১৩ দিন | ১৮ দিন |
ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১৭ দিন | ১২ দিন |
মার্চ, ২০২৪ | ১৪ দিন | ১৭ দিন |
এপ্রিল, ২০২৪ | ০ দিন | ৩০ দিন |
মে, ২০২৪ | ১৪ দিন | ১৭ দিন |
জুন, ২০২৪ | ৪ দিন | ২৬ দিন |
জুলাই, ২০২৪ | ১০ দিন | ২১ দিন |
আগস্ট, ২০২৪ | ৪ দিন | ২৭ দিন |
সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১৬ দিন | ১৪ দিন |
শিক্ষার্থীদের ব্যাসিক ঘাটতির বাস্তব চিত্র
নতুন কারিকুলাম (২০২৩) বাস্তবায়নের পরও, ২০২4 সালের ক্লাসে বহু শিক্ষার্থী পুরোনো ব্যাসিক অর্জন না করেই উপরের শ্রেণিতে উঠে এসেছে। এখন নিয়মিত ক্লাস না থাকায় এই শিখন–ঘাটতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত, আত্মবিশ্বাসহীন এবং পরীক্ষাভীতিতে ভুগছে।
শিক্ষার ভবিষ্যৎ—নাকি অনিশ্চয়তা?
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবনায় অনেক প্রশ্ন জাগে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি শুধু নামেই আছে? শিক্ষার্থী যদি স্কুলেই না যেতে পারে, তবে পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা আদৌ কতটা অর্থবহ? আমরা কি এমন এক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছি, যেখানে ‘স্কুল’ মানেই কোচিং ব্যবসার অঙ্গ?
শেষ কথাঃ আমরা কি শুধু প্রশ্ন করবো, না পরিবর্তনের পথে হাঁটবো?
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের একসাথে ভাবতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা, নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট, অনলাইন রিভিশন ক্লাস—এসবই হতে পারে আশার আলো।
তুমি চাইলে Sajan Sir-এর নিচের কিছু কন্টেন্ট ঘুরে দেখতে পারো—
🔗 SSC Math Mission: High Voltage MCQ Series
🔗 HSC25: Trigonometry Crash Course in 12 Days
🔗 Calculator Hacks with Sajan Sir
🧠 ব্লগটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো, আর মন্তব্যে তোমার অভিমত জানাও।
✍️ লেখক: সাজন চক্রবর্ত্তী
🎓 ইউটিউব চ্যানেল: Sajan Sir
📘 ফেসবুক পেজ: Sajan Chakraborty